সামুদ্রিক মৎস্যজীবীদের নিয়ে সামুদ্রিক উপন্যাস মুক্তা মাছ। শংকরপুর সমুদ্র সৈকতের লেখক সন্তোষ করের উপন্যাস স্থান পেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমে।ড: শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বিশ্ববিদ্যালয় রাঁচির ঝাড়খন্ডে স্নাতকোত্তর বাংলা সিলেবাসে পড়ানো হচ্ছে সন্তোষ করের উপন্যাস "দাঁড়- জাল মুক্তা মাছ" ।এই একই ইউনিভার্সিটি গ্রাজুয়েশনে পাঠ্যপুস্তকে সামিল হয়েছে সন্তোষ করের আর একটি উপন্যাস "এখন এই মন"পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রামনগরের উপকূলবর্তী এলাকার এক অনন্য সাহিত্য সাধক। বাংলা সাহিত্যের এক অন্য ধারার লেখক। সমুদ্র উপকূলেবর্তী মানুষ হওয়ায় মৎস্যজীবীদের জীবন কাহিনী ভাবনা , সমুদ্রের বিষয় তাকে অনেকটাই প্রভাবিত করেছে। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। একে একে লিখে গেছেন বিভিন্ন উপন্যাস গল্প কবিতা।লেখক সন্তোষ করে জন্ম ১৯৪৩ সালের ১৯ শে সেপ্টেম্বর দীঘার কাছে ক্ষীরপাল গ্রামে। পিছাবনী বাণী নিকেতন হাই স্কুলে পদার্থবিদ্যার শিক্ষক ছিলেন তিনি। শিক্ষকতার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চায় মগ্ন ছিলেন সন্তোষ কর। তার লেখা কাব্যগ্রন্থ গুলি হল "মরুভূমি বেদুইন"গল্পগ্রন্থ "গরল"উপন্যাস "দাঁড়- জাল মুক্তা মাছ"এখন অবসর জীবনে লেখা লেখির গতি কমেছে। তার লেখা বই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ছাত্রীদের সিলেবাসে পঠন-পাঠনের জন্য কাজে লাগছে তার জন্য তিনি স্বভাবতই খুশি। তার লেখনি শুধু বাংলা সাহিত্যে অন্য ধারার লেখাই শুধু নয় সামুদ্রিক উপন্যাসের এক দিশা দেখিয়েছে। রামনগরের শংকরপুরের সমুদ্রের পাড়ে প্রত্যন্ত ক্ষীরপান গ্রামের লেখক এর ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি দিশা দেখিয়েছে বাংলা সাহিত্যের এক নতুন দিক কে। শুধু সমুদ্র কেন্দ্রিক উপন্যাসে নয়, এই উপন্যাসের মধ্যে রামনগরের আঞ্চলিক ভাষা উপন্যাসের চরিত্রের মাধ্যমে বিকশিত হয়েছে। যা আঞ্চলিক ভাষা সাহিত্য ও মৎস্যজীবীদের জীবনযাত্রা ও সামুদ্রিক জীবনের চিত্র বারে বারে বিকশিত হয়েছে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর ডঃ সুরঞ্জন মিদ্দা মহাশয়ের সম্পাদনায় "দাঁড়- জাল মুক্তা মাছ" উপন্যাসের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে "মুক্তা মাছ" শিরোনামে 21 শে এপ্রিল ২০১৮ সালে। লেখক স্মৃতিচারণ করলেন অতীত লেখনীর স্মৃতি।
সন্তোষ কর বললেন আমার বয়স যখন ৩৫.৩৬ছিল তখন আমি লেখালেখি করতাম ।সেই সময় কিছু উপন্যাস লিখেছিলেন। তার মধ্যে দুখানা পাবলিশ হয়ে গেছে আর এক খানার কাজ চলছে, উপন্যাসটির নাম "মাটির কাছে মা"। তিনি বলেন উনার প্রথম উপন্যাস এর নাম " দাঁড় জাল মুক্তা মাছ"। আর এখন কাজ চলছে "মাটির কাছে মা"। তিনি বলেন বাড়ির কাছে লোকেরা যেতো তাদের সুখ দুঃখের কথা তুলে ধরেছেন। উনার ওই পাঠ্যপুস্তক ঝাড়খন্ড ইউনিভার্সিটি তে বাংলা অনার্সে পড়ানো হচ্ছে, আর বাংলা এম এ ক্লাসের পাঠ্য হচ্ছে "দাঁড় জাল মুক্তা মাছ"।লেখকের মুক্তা মাছ উপন্যাস নিয়ে ড. অনির্বাণ সাহুর অভিব্যক্তি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ - মোহনা থেকে সমুদ্রের জলে মাঝিদের আত্মবিশ্বাসের শুধু কাহিনী নয় বাংলার আঞ্চলিক ভাষার নির্মম বাস্তবের সঙ্গে রোমান্সের এক অভিনব আলেখ্য। জেলে পাড়ার সনাতন বিশ্বাস ও আধুনিক সংস্কারের দ্বন্দ্ব একাকার জল ও জলের মৎস্যপুরাণ মুক্তা মাছ।"শংকরপুর মৎস্য বন্দর থেকে কিছুটা দূরে উপন্যাসের পটভূমি মৎস্যজীবী সম্প্রদায় বা জেলের সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন সংগ্রাম সমুদ্র নির্ভর জীবিকা ভালো-মন্দ, চড়াই উতরাই, প্রেম প্রত্যাখ্যান, সমস্যা সম্বল পিছিয়ে পড়া সংস্কার অন্ধবিশ্বাস জীবন ঘিরে এই উপন্যাস। সবকিছু সঙ্গে উপন্যাসটি হয়েছে স্থানীয় উড়িয়া এবং বাংলায় মিশ্রিত কথিত ভাষাকে আধার করে।
রামনগর কলেজের বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক গৌতম প্রামাণিক জানালেন তিনি হলেন শক্তিমান কবি এবং লেখক, একাধারে তিনি গদ্যচর্চা করছেন অন্যদিকে কাব্য চর্চা ও করছেন। আমি দেখছি মরুভূমি বেদুইন নামে একটি কাব্য তার প্রথম জীবনে বেরোয় তখন তার বয়স ছিল ২৬ কি ২৭ বছর। তাতে গদ্য কবিতাও আছে পদ্ম কবিতাও আছে। সন্তোষ কর হলেন বাংলা সাহিত্যের নতুন দিশার এক মহীরূহ।
রামনগর কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক বরুণ কুমার দাস বলেন সন্তোষ করের মতন সাহিত্যিক বাংলা সাহিত্যের এক স্বকীয় ভাবনার লেখক। বাংলা সাহিত্যের অন্যধারা লেখক সন্তোষ স্তরের দুটি উপন্যাস ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় খুশি উপকূলবর্তী এলাকার সাহিত্য অনুরাগী মানুষ সহ গোটা বাংলা।